Graphic Design
চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন (ইংরেজি: Graphic Design বা গ্রাফিক্ ডিজাইন্) বলতে এমন একটি পেশা,কলা, উচ্চশিক্ষায়তনিক পাঠ্য বিষয় বা ফলিত শিল্পকলার কার্য্যকলাপকে বোঝায়, যেখানে কোনও একটি পৃষ্ঠতলে বা পাতায় মুদ্রাক্ষরসজ্জা, আলোকচিত্রশিল্প ও চিত্রাঙ্কনকলার দক্ষ প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণত একাধিক সুনির্বাচিত প্রতীক, চিত্র ও পাঠ্যবস্তুর (অক্ষর, শব্দ, ইত্যাদির) পরিকল্পিত মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি সুসজ্জিত সমাহার সৃষ্টি করে কোনো ধারণা বা বার্তাকে দৃষ্টিগ্রাহ্য রূপ দান করা হয়। যার অন্তিম লক্ষ্য নকশাটিকে বহুসংখ্যক পাঠক-দর্শকের কাছে সেই বার্তাটিকে জ্ঞাপন করা। সহজকথায় গ্রাফিক ডিজাইন হল নকশা এবং চারুকলার একটি আন্তঃবিভাগীয় শাখা, যার অনুশীলনের মাধ্যমে ম্যানুয়াল অথবা ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন শক্তি এবং পার্শ্বীয় চিন্তাভাবনার ব্যবহার করে দৃষ্টিনির্ভর চিত্র ও রুপ তৈরি করা যায়।
এর মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং, প্রযুক্তিগত অথবা শৈল্পিক অঙ্কন, সাইনেজ, আলোকচিত্রশিল্প, চিত্র, ভিডিও সম্পাদনা, থ্রিডি মডেলিং, অ্যানিমেশন, প্রোগ্রামিং এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে প্রয়োগ করা যায়।
যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় (G.D.)গ্রাফিক ডিজাইনের বার্তা এনকোডার বা দোভাষী হিসাবে ভূমিকা পালন করে। সাধারণত, গ্রাফিক ডিজাইন মুদ্রাক্ষরসজ্জার নান্দনিকতা, পাঠ্যবস্তুর রচনামূলক বিন্যাস, অলঙ্করণ এবং ধারণা প্রকাশের জন্য চিত্রকল্প ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। ডিজাইনের কাজটি গ্রাহকের চাহিদার উপর ভিত্তি করে করা হয়, যা ভাষাগতভাবে, মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এর মানে গ্রাফিক ডিজাইন একটি ভাষাগত বার্তাকে গ্রাফিক্ চিত্রে রূপান্তরিত করে।
প্রয়োগের ক্ষেত্র হিসাবে গ্রাফিক্ ডিজাইনে, জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে যে কোনো ধরনের ভিজ্যুয়াল যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এটি বিজ্ঞাপনের কৌশলগুলিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে বা এটি বিমান চালনা অথবা মহাকাশ অনুসন্ধানের জগতেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে, কিছু দেশে গ্রাফিক ডিজাইন শুধুমাত্র স্কেচ এবং অঙ্কন তৈরির সাথে সম্পর্কিত। এটি অবশ্যই একটি ভুল ধারনা। কারন, ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন (একটি বিশাল শ্রেণির) একটি ছোট অংশ যেখানে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
প্রাচীনত্ব ও মধ্যযুগীয় উৎপত্তির পাশাপাশি, প্রয়োগ শিল্প হিসাবে গ্রাফিক্ ডিজাইন মৌলিকভাবে ১৫ শতকে ইউরোপে মুদ্রণের উত্থান এবং শিল্প বিপ্লবে ভোক্তা সংস্কৃতি বৃদ্ধির সাথে যুক্ত ছিল। সেখান থেকে এটি পশ্চিমের মানুষের কছে একটি স্বতন্ত্র পেশা হিসাবে আবির্ভূত হয়, ১৯ শতকে এটি বিজ্ঞাপনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে উঠে এবং এর বিবর্তন ২০ শতকে এটিকে একীভূত করে। বর্তমানে তথ্য বিনিময় দ্রুত এবং ব্যাপক বৃদ্ধির কারনে, অভিজ্ঞ ডিজাইনারদের চাহিদা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি, বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তির বিকাশের কারণে এর চাহিদা দিন দিন বেরেই চলেছে।
এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট নকশাটি কোনও ভৌত মাধ্যমে (physical) অথবা অপার্থিব মাধ্যমে (virtual) রূপায়িত হতে পারে, স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি সময়ের জন্য পরিবেশিত হতে পারে, ক্ষুদ্র একক ডাকটিকিট থেকে শুরু করে জাতীয় ডাকসংকেত ব্যবস্থার মত বৃহৎ হতে পারে। নকশার দর্শকের সংখ্যা সীমিত হতে পারে, যেমন কোন এককালীন প্রদর্শনীর নকশা প্রণয়ন বা সীমিত-প্রকাশনার বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ; আবার এটি কখনো লক্ষ কোটি দর্শকের জন্যও তৈরি করা হতে পারে, যেমন কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের নকশা। তবে কেবল বাণিজ্যিক নয়, শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন করা হতে পারে। চিত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতারা প্রাচীরপত্র, বিজ্ঞাপনী প্রচারপত্র, মুদ্রিত বিজ্ঞাপন, মোড়কসহ অন্যান্য মুদ্রিত মাধ্যমের জন্য এবং সংবাদপত্রে তথ্য লেখচিত্রণের জন্য নকশা প্রণয়ন করেন।
Graphic Design |
No comments